Thursday 16 July 2020

আরও এক নতুন পৃথিবীর খোঁজ, উচ্ছ্বসিত বিজ্ঞানীরা

আরও এক নতুন পৃথিবীর খোঁজ, উচ্ছ্বসিত বিজ্ঞানীরা
ঠিক যেন আয়নায় দেখা প্রতিচ্ছবি। পৃথিবীর বাইরেও আর এক পৃথিবী। বনবন করে ঘুরে চলেছে আরও এক সূর্যের চারপাশে। এই নতুন খোঁজ পেয়ে আশায় বুক বেঁধেছেন বিজ্ঞানীরা। বলা হচ্ছে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে পৃথিবীর মতো দেখতে গ্রহও আছে, আবার সূর্যের মতো উজ্জ্বল নক্ষত্রও আছে। তবে এই গ্রহ-তারার জুটি রয়েছে আরও কাছাকাছি, পাশাপাশি। পৃথিবী থেকে মাত্র তিন হাজার আলোকবর্ষ দূরে।
 
তারার নাম কেপলার-১৬০( Kepler-160) । তাকে প্রদক্ষিণ করছে পৃথিবীর মতো দেখতে কেওআই-৪৫৬.০৪ (KOI-456.04)। পৃথিবীর কাছাকাছি এমন আরেকটি পৃথিবী যে রয়েছে, সে কথা অবশ্য আগেই জানিয়েছিল নাসার কেপলার স্পেস টেলিস্কোপ। এবার হাতেনাতে এই প্রমাণ দিয়েছে গটিনজেনের ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর সোলার সিস্টেম রিসার্চ। তবে সেই পৃথিবীতে মানুষের বা প্রাণী ও উদ্ভিদের অস্তিত্ব আছে কিনা তা স্পষ্ট নয়।
 
নাসা বলেছিল গোটা নক্ষত্রপুঞ্জে সূর্যের মতো প্রতি পাঁচটা তারার অন্তত একটির চারপাশে ঘুরছে একটা করে পৃথিবীর মতো গ্রহ। যার আকার থেকে শুরু করে আবহাওয়া, অনেক কিছুই মিলে রয়েছে পৃথিবীর সঙ্গে। তার মধ্যে আবার বেশ কিছু গ্রহে নাকি বেশি শীতও পড়ে না, আবার তাপমাত্রার পারদও চড়ে না। মোটামুটি প্রাণ তৈরি হওয়ার মতো পরিবেশ। তাই পৃথিবীর বাইরে প্রাণের খোঁজে মহাকাশবিজ্ঞানীদের অভিযান দীর্ঘ বছরের।
 
ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের স্পেস টেলিস্কোপ দেখিয়েছে নতুন খুঁজে পাওয়া এই সৌরমণ্ডলের যে নেতা অর্থাৎ কেপলার-১৬০ নক্ষত্র সূর্যের মতো ইনফ্রারেড রশ্মির বিকিরণ করে ঠিকই, তবে অত আগুনে রূপ নেই। এই তারার পৃষ্ঠদেশের তাপমাত্রা ৫২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সূর্যের চেয়ে ৩০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম। এর তেজও সূর্যের চেয়ে অনেকটাই কম। এই তারা নিভু নিভু আঁচের। মহাকাশবিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলে ‘রেড ডোয়ার্ফ স্টার’ (Red Dwarf Stars) বা লাল বামন তারা। মহাকাশে এমন অনেক তারা আছে যেগুলি তুলনায় কম উজ্জ্বল। তাদের ‘লাল বামন’ বলা হয়।
 
মহাকাশবিজ্ঞানীরা বলেন, মহাকাশে ছড়িয়ে থাকা লাল বামনের পনেরো শতাংশের চারপাশে পৃথিবীর মতো গ্রহ ঘুরছে। পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা তথ্য দিয়ে দেখিয়েছিলেন, ৫০ শতাংশ লাল বামনের চারপাশেই রয়েছে এমন গ্রহ। কেওআই-৪৫৬.০৪ এক্সোপ্ল্যানেট (সৌরজগতের বাইরে থাকা গ্রহ)বা ভিন গ্রহটিও কেপলার-১৬০ নক্ষত্রের চারপাশে তার নির্দিষ্ট কক্ষপথে পাক খেয়ে চলেছে।
 
তবে বিজ্ঞানীদের ধারণা, ওই নক্ষত্র ও গ্রহের মাঝের দূরত্ব বেশি নয়। সূর্য থেকে বুধের দূরত্ব যতটা, সম্ভবত তার থেকে কাছেই রয়েছে কেওআই-৪৫৬.০৪। আর লাল বামন তারার তেজ যেহেতু বেশি নয়, তাই সে গ্রহে প্রাণ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে কি না সে নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখন মাথা ঘামাচ্ছেন। যদিও অধিকাংশ বিজ্ঞানীর ধারণা, এই এক্সোপ্ল্যানেটের গড়ন পৃথিবীর মতো হলেও তার ভর বা পরিবেশ নিয়ে বেশি কিছু জানা যায়নি। এই গ্রহের পৃষ্ঠদেশ কেমন, পৃথিবীর মতো পাথর-মাটির নাকি বরফে ঢাকা, তা জানাও সহজ কাজ নয়।
 
এই সৌরজগতের বাইরে কোনও গ্রহ ‘হ্যাবিটেবল জোন’-এ (যেখানে পৃথিবীর মতো প্রাণের সম্ভাবনা থাকতে পারে) আছে কি না, তা নিয়ে বহু বছর ধরে কাজ করছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। এ বছরেই নাসার ‘ট্রানসিটিং এক্সোপ্ল্যানেট সার্ভে স্যাটেলাইট’ বা টেস (TESS)-এর লেন্সে ধরা দিয়েছে পৃথিবীর মতো দেখতে  একটি নীলাভ গ্রহ। পৃথিবীর এই যমজের নাম দেওয়া হয়েছে ‘টিওআই ৭০০ ডি (TOI 700 d)।’ এর আগে কেপলার ৭৮বি নামক এক গ্রহের সন্ধান পেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। সে গ্রহের ঘনত্ব পৃথিবীর মতো, পৃষ্ঠদেশও পাথুরে। কিন্তু তাপমাত্রা এতই বেশি যে সেখানে প্রাণ থাকার সম্ভাবনা বেশ কম।
 
এক্সো-প্ল্যানেটের (সৌরজগতের বাইরের গ্রহ) খোঁজে গত ২০ বছর ধরে কাজ করে চলেছেন বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা। কেপলার স্পেস টেলিস্কোপ প্রায় সাড়ে তিন হাজার ভিন গ্রহের হদিশ পেয়েছে। আমাদের সৌরমণ্ডলের প্রতিবেশী আলফা সেনটাওরি সৌরজগতে প্রক্সিমা সেনটাওরি-বি নামের একটি গ্রহের খোঁজ দিয়েছিল নাসার ‘ট্রানসিটিং এক্সোপ্ল্যানেট সার্ভে স্যাটেলাইট’ বা টেস (TESS)। সেই গ্রহটিও সূর্যের মতোই নক্ষত্র প্রক্সিমা সেনটাওরি –র চারপাশে পাক খাচ্ছে। আমাদের সৌরমণ্ডল থেকে মাত্র ৪.২৪ আলোকবর্ষ দূরে। তবে সে গ্রহেও  প্রাণ আছে কিনা সেটা এখনও নিশ্চিত নয়।
 
গত কয়েক দশক ধরেই পৃথিবীর মতো গ্রহের খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছে নাসা। এখনও পর্যন্ত পাঁচশোরও বেশি গ্রহ, বামন গ্রহ ও উপগ্রহের সন্ধান মিলেছে যাদের সঙ্গে পৃথিবীর নানা বিষয়ে মিল পাওয়া যায়। এই গ্রহগুলির মধ্যে কেপলার-৪৫২বি-ই আমাদের সৌরজগতের গ্রহগুলোর মতো। এই গ্রহে আবার জল থাকারও প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

SHARE THIS

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

2 comments: